মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৮:১০ অপরাহ্ন

ইউক্রেনের দখল করা অঞ্চলগুলো কি ছেড়ে দেবে রাশিয়া?

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২
prothomalo-bangla_2022-02_78be5586-12a9-4ae7-aa93-0b657b3bc955_russia_3

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। দীর্ঘ সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি অঞ্চল দখলও করে নিয়েছে রুশ সেনারা। এসব অঞ্চলের মধ্যে ডোনেটস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন- এই চার অঞ্চলকে ‘গণভোটের’ মাধ্যমে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এরপর তিনি সতর্ক করেছেন এসব অঞ্চলে হামলা হলে তা রাশিয়ার ওপর হামলা হিসেবেই বিবেচিত হবে।

কিন্তু ইউক্রেন এই অন্তর্ভুক্তিকে শুধু অস্বীকারই করছে না বরং এসব এলাকায় হামলা করে তাদের ভূমি পুনরুদ্ধারও করছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ সেনাদের কবল থেকে বেশ কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। সেসব জায়গায় পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে রুশ সেনারা। সেখানে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে রাশিয়া। এমন পরিস্থিতিতে পুতিনের সামনে এখন বিকল্প কী? তিনি কি দখল ছেড়ে দেবেন নাকি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন?

এ বিষয়ে কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমর কৌশল বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, দখলে নেওয়া এলাকাগুলো ধরে রাখা ছাড়া রাশিয়ার সামনে আর কোনও উপায় এখন নেই।
তিনি বলেন, “রুশ সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার অনেক কারণ রয়েছে। একটি হল ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের স্বদেশ রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়ে আপ্রাণ যুদ্ধ করে চলেছে, জনসাধারণের সামগ্রিক সমর্থন রয়েছে তাদের প্রতি। তারা জাতীয় চেতনায় যতটা উদ্বুদ্ধ রুশ সৈন্যরা ততটা নয় বলেই মনে হয়।”

রাশিয়ার সামনে আরেকটি পথ আছে, আর তা হল অত্যাধুনিক বিমান ও নৌশক্তি ব্যবহার করে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া। যুদ্ধের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত রাশিয়াকে তার অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার খুব একটা করতে দেখা যায়নি। এবার কি রাশিয়া সেটা করবে?

ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি সিদ্ধান্ত দেয় তারা ইউক্রেনকে আরও অত্যাধুনিক অস্ত্র দেবে তাহলে রাশিয়া কী পদক্ষেপ নেবে সেটা বলা কঠিন। তবে ধারণা করা যায় যেসব অস্ত্র রাশিয়া ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য রিজার্ভ করে রেখেছে সেগুলো তখন মোতায়েন করতে চাইবে কারণ কোনও পক্ষই পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে আগ্রহী নয়। মুখে যতই বলুক না কেন কোনও পক্ষই তা চাইবে না।”

কীভাবে ইউক্রেনীয় বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পাল্টা হামলায় এই সাফল্য পাচ্ছে, তা নিয়ে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তাদের সূত্র থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কয়েক মাস আগে মার্কিন এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা গোপন শলা-পরামর্শের মধ্য দিয়ে এই সমর কৌশলের সূচনা হয়।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টে জেলেনস্কির একজন শীর্ষ উপদেষ্টা কয়েকবার নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন। জেনারেল মার্ক মিলি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সিনিয়র ক’জন জেনারেলের সাথে নিয়মিত আলোচনা করেছেন। কিয়েভে বসে সেই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়েছেন বেশ ক’জন ব্রিটিশ সামরিক পরামর্শকও।

ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি রাশিয়ার প্রতিকূলে থাকলেও এটা স্পষ্ট যে পুতিন একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পরমাণু অস্ত্র ছাড়াও তার সামনে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার কিংবা সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর মতো অন্য বিকল্পও আছে। অন্যদিকে ইউক্রেনও পাচ্ছে অস্ত্রের নতুন চালান। ফলে এটা স্পষ্ট যে, ইউক্রেনে যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়তে চলেছে।

ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, “রুশ সরকার একথাও ঘোষণা করেছেন এই চারটি এলাকার সঙ্গে অন্য যেসব দেশের সীমারেখা রয়েছে সেই সীমারেখাগুলো ঠিক কোথায় আঁকা হবে সেটা নিশ্চিত করার জন্য তাদের ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাবে। কাজেই সীমান্ত নিয়ে রুশ কর্তৃপক্ষ নিজেদের সময় দিচ্ছেন। কারণ এই মুহূর্তে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি রাশিয়ার পক্ষে যাচ্ছে না

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর